৪. 8051 এর পিন ডায়াগ্রাম এবং প্রয়োজনীয় সার্কিট কানেকশন


8051 হল ৪০ পিনের একটি ডুয়াল ইন লাইন চিপ। পিনের সংখ্যা ৪০ হলেও অবশ্য কোনটা কোন পিন তা মনে রাখা কঠিন কোন কাজ নয়। কেননা এই ৪০টি পিনের মধ্যে ৩২ টি পিনই হল ইনপুট/আউটপুট পিন, ২টি পিন ৫ ভোল্ট এবং গ্রাউন্ডের জন্যে, ২ টি পিন ক্লক সিগন্যাল ইনপুটের জন্যে, ১ টি রিসেট পিন , অবশিষ্ট থাকে আর ৩ টি পিন যথা- EA(External Access), PSEN(Program Store Enable),ALE(Address Latch Enable). এই হল টোটাল ৪০ পিনের হিসাব। নিচে 8051 এর পিন ডায়াগ্রাম এবং এর প্রত্যেক পিনের কাজ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনা করা হল।





চিপের উপরে ডট সাইনের নিকটস্থ পিনকে ১ নম্বর পিন ধরা হয়। পিনগুলোর কাজের বর্ণনা নিচে দেয়া হল-
  • পিন ১ থেকে ৮ঃ এই ৮ টি পিন পোর্ট-১ নামে পরিচিত। এই পিনগুলো বাইডিরেকশনাল ইনপুট/আউটপুট পিন। এই পিনের আর কোন এক্সট্রা ফাংশন নেই। এরা প্রত্যেকেই ইন্টারনালই পুল-আপ রেজিস্টারের সাথে কানেক্টেড থাকে।
  • পিন ৯ঃ এটা হল রিসেট পিন। যেকোন ডিজিটাল আইসিতেই রিসেট পিন থাকে।এই পিনটি হল একটিভ হাই। অর্থাৎ ৫ ভোল্টের সাথে এই পিনটি সংযোগ করলে মাইক্রোকন্ট্রোলারের কোড আবার প্রথম থেকে রান হয়। অর্থাৎ মাইক্রোকন্ট্রোলার রিবুট নেয়।
  • পিন ১০ থেকে ১৭ঃ এই ৮ টি পিন পোর্ট-৩ নামে পরিচিত। এই পিনগুলো বাইডিরেকশনাল ইনপুট/অাউটপুট পিন হিসেবে কাজ করার সাথে সাথে এক্সট্রা কিছু ফাংশনও সম্পূর্ণ করে থাকে। এগুলোও ইন্টারনালই পুল-আপ রেজিস্টারের সাথে যুক্ত থাকে। এক্সট্রা ফাংশন গুলো খুব সংক্ষেপে বলা হল-
    • ১০ নম্বর পিন সিরিয়াল কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে রিসিভার পিন হিসেবে কাজ করে।
    • ১১ নম্বর পিন সিরিয়াল কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে ট্রান্সমিটার পিন হিসেবে কাজ করে।
    • ১২ নম্বর পিন এক্সটারনাল ইন্টারাপ্ট-০ পিন হিসেবে কাজ করে। (একটিভ লো পিন)
    • ১৩ নম্বর পিন এক্সটারনাল ইন্টারাপ্ট-১ পিন হিসেবে কাজ করে।(একটিভ লো পিন)
    • ১৪ নম্বর পিন টাইমার-০ এর ইভেন্ট কাউন্টার পিন হিসেবে কাজ করে।
    • ১৫ নম্বর পিন টাইমার-১ এর ইভেন্ট কাউন্টার পিন হিসেবে কাজ করে।
    • ১৬ নম্বর পিন এক্সটারনাল ডেটা মেমোরি রাইটের জন্যে ব্যবহৃত হয়।(একটিভ লো পিন)
    • ১৭ নম্বর পিন এক্সটারনাল ডেটা মেমোরি রিড করার জন্যে  ব্যবহৃত হয়।(একটিভ লো পিন)
  • পিন ১৮ এবং ১৯ঃ এই দুটো পিন ক্লক পালস-ইনপুট পিন হিসেবে কাজ করে। মাইক্রোকন্ট্রোলারের কাজ করার জন্যে যে ক্লক পালস লাগে তা এই দুই পিনের সাথে কানেক্ট করা হয়। সাধারণত ক্রিস্টাল অসসিলেটার আমরা এই পিনদ্বয়ের সাথে কানেক্ট করে থাকি।
  • পিন ২০ঃ এটা হল গ্রাউন্ড পিন।এই পিনের সাথে গ্রাউন্ড কানেকশন দিয়ে রাখা হয়।
  • পিন ২১ থেকে ২৮ঃ এই পিনগুলো পোর্ট-২ নামে পরিচিত। এগুলো বাইডিরেকশনাল ইনপুট/আউটপুট পিন হিসেবে কাজ করার সাথে সাথে হায়ার অর্ডার এড্রেস বাস হিসেবেও কাজ করে। আমরা আগেই জেনেছি যে 8051 এর ডেটাবাস ৮ বিট এবং এড্রেসবাস ১৬ বিট। ১৬ বিট এড্রেসবাসের হায়ার ৮ বিটের বাস হল এই পোর্টটি। এই পোর্টের প্রত্যেক পিনই ইন্টারনালই পুল-আপ রেজিস্টারের সাথে কানেক্টেড থাকে।
  • পিন ২৯ঃ এই পিনের নাম হল PSEN(Program Store Enable) এবং এটি হল একটি ইনপুট পিন। এক্সটারনাল প্রোগ্রাম মেমোরি থেকে সিগন্যাল রিড করার জন্যে এই পিনটি ব্যবহৃত হয়। (একটিভ-লো পিন)
  • পিন ৩০ঃ এই পিনটি হল EA(External Access) পিন। আমরা আগেই জেনেছি যে 8051 এর প্রোগ্রাম মেমোরি ৪কিলোবাইট। এই সীমিত প্রোগ্রাম মেমোরিতে আমাদের প্রোগ্রাম না ধরলে, আমরা এক্সাটারনাল মেমোরি ইউজ করে থাকি। আর এই পিনটি এক্সটারনাল মেমোরি ইউজ করার কাজেই ব্যবহৃত হয়। যদি এই পিনটি আমরা হাই করে রাখি তাহলে প্রোগ্রাম অন-চিপ রোম থেকেই এক্সিকিউট হবে, আর একে লো করে রাখলে এক্সটারনাল রোম থেকেও কোড এক্সিকিউট হবে। নরমালি যদি কোন এক্সটারনাল রোম ইউজ না করা হয় তাহলে একে সর্বদা ৫ ভোল্টের সাথে কানেক্ট করে রাখতে হবে।
  • পিন ৩১ঃ এই পিনটি হল ALE(Address Latch Enable) পিন। আমরা একটু আগেই 8051 এর ডেটা-বাস এবং এড্রেস-বাস নিয়ে কথা বলেছি। পোর্ট-২ হায়ার এড্রেস-বাস (হায়ার ৮ বিট) হিসেবে কাজ করে, আর পোর্ট-০ লোয়ার এড্রেস-বাস (লোয়ার ৮ বিট) এবং একই সাথে ডেটা-বাস হিসেবেও কাজ করে। তো একই পোর্টের মাধ্যমে এড্রেস এবং ডেটা আদান-প্রদান করা তো একটু ঝামেলার কাজ। তো এই ঝামেলা দূর করার জন্যেই এই ল্যাচ পিনটি ইউজ করা হয়। এটা অনেকটা ডিমাল্টিপ্লেক্সিং এর কাজ করে থাকে।এটার হাই এবং লো স্টেট এর জন্যে পোর্ট-০ এড্রেস এবং ডেটা বাস হিসেবে  কাজ করে থাকে।
  • পিন ৩২ থেকে ৩৯ঃ এই ৮ টি পিন পোর্ট-০ নামে পরিচিত। নরমালি এই পিনগুলোকেও ইনপুট/আউটপুট পিন হিসেবে ইউজ করা যায়। কিন্তু অন্য পোর্ট গুলোর থেকে এই পোর্টের একটু পার্থক্য হল এই পোর্টের পিন গুলো ইন্টারনালই পুল-আপ রেজিস্টারের সাথে কানেক্টেড থাকেনা। এরা ওপেন-কালেক্টর পিন, তো এই পিনগুলোকে ইনপুট/অাউটপুট পিন হিসেবে কাজ করাতে হলে অবশ্যই এক্সাটারনাল পুল-আপ রেজিস্টার কানেক্ট করে নিতে হবে। আর এটা ছাড়াও এই পোর্টের বিশেষ পরিচয় আমরা এর আগের পয়েন্টেই পড়েছি। সেটা হল এই পোর্ট লোয়ার এড্রেস বাস এবং একই সাথে ডেটা-বাস হিসেবে কাজ করে থাকে।
  • পিন ৪০ঃ এই পিনটির সাথে ৫ ভোল্ট কানেক্ট করতে হয় 8051 মাইক্রোকন্ট্রোলারকে কাজ করাতে হলে।

8051 মাইক্রোকন্ট্রোলারকে প্র্যাক্টিক্যালি ইউজ করার জন্যে নিচের চিত্রের মত কানেকশন দিয়ে নিতে হবে। উপরের পিন সম্পর্কে বর্ণনা পড়ে আমরা মোটামোটি সবাই বুঝতে পেরেছি যে কোন পিনের কি কাজ। সেই অনুযায়ীই সার্কিট কানেকশন দেয়া হয়েছে।



২০ নম্বর পিনে গ্রাউন্ড কানেকশন এবং ৪০ নম্বর পিনে ৫ ভোল্ট কানেকশন দেয়া হয়েছে। EA পিনে ৫ ভোল্ট কানেকশন দেয়া হয়েছে কারন আমরা বাই-ডিফল্ট অন-চিপ রোম ইউজ করে থাকি। ১৮ এবং ১৯ নম্বর পিনে ক্রিস্টাল অসসিলেটর ইউজ করা হয়েছে এবং সেই সাথে প্যারালালে ৩০ পিএফ মানের ক্যাপাসিটর লাগানো হয়েছে। ক্লক পালস থেকে যাতে কোন রকম নয়েজ না আসে সেজন্যে এই প্যারালাল ক্যাপাসিটর ইউজ করা হয়ে থাকে। ক্রিস্টাল অসসিলেটর হিসেবে আমরা ১২ মেগাহার্টজের ক্রিস্টালই সাধারনত ইউজ করে থাকি। তবে সিরিয়াল কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে ১১.০৫৯২ মেগাহার্টজ ইউজ করা হয়ে থাকে। তবে শার্প টাইমিং রিলেটেড কোন প্রোজেক্ট হলে ২৪ বা ৩৩ মেগাহার্টজ পর্যন্ত ইউজ করা যায়। এটা অনেকটা এপ্লিকেশনের উপর ডিপেন্ড করে থাকে।

রিসেট পিনে আমরা একটি ক্যাপাসিটর এবং রেজিস্টার দিয়ে গঠিত টাইমিং সার্কিট দেখতে পাচ্ছি এবং  সেই সাথে একটি সুইচ দেখতে পাচ্ছি ক্যাপাসিটরের প্যারালালে। রিসেট পিনে এই ধরনের টাইমিং সার্কিট দেয়া হয় পাওয়ার অন রিসেট মোডের জন্যে। কেননা মাইক্রোকন্ট্রোলারে পাওয়ার দেয়ার সাথে সাথেই একবার রিসেট করে নেয়া জরুরী। পাওয়ার অন করার সাথে সাথে অর্থাৎ ৫ ভোল্ট এপ্লাই করার সাথে সাথে ক্যাপাসিটরে চার্জ বিল্ড আপ হতে থাকে, এবং রেজিস্টারের মাধ্যমে চার্জ বিল্ড আপ একটি নির্দিষ্ট সময় পরে হয়ে থাকে। চার্জ বিল্ড-আপ হয়ে ক্যাপাসিটরের চার্জ ৫ ভোল্টের কাছাকাছি হলে রিসেট পিনে একটি  সিগন্যাল যায় এবং কোড এক্সিকিউট একদম ইনিশিয়াল মেমোরি লোকেশন থেকে শুরু হয়। আর কখনো যদি নিজের ইচ্ছায় মাইক্রোকন্ট্রোলারকে রিসেট দিতে হয় তাহলে জাস্ট ক্যাপাসিটরের প্যারালালে সুইচটা টিপে দিলেই  রিসেট হয়ে যাবে।

***মাইক্রোকন্ট্রোলার কে প্র্যাক্টিকালি কাজ করাতে হলে অবশ্যই পাওয়ার-অন-রিসেট সার্কিট এবং ক্লক সার্কিট লাগবেই।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি